স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সুমন হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসান (৪৫)কে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২৮ মে) দিবাগত সোয়া ১২টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার ভগিরথপুর এলাকায় মেহেরপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এঘটনায় আহত হয় আরও ৪/৫ জন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
নিহত মাহাবুবুল হাসান নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন ভগিরথপুর গ্রামের মৃত হামিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আহতদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন ভগিরথপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ। তাদেরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, রাত পৌনে ১২টার দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসান আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে তার কর্মীদেরকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কিছুদিন যাওয়ার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালু ট্রাকের আড়াল থেকে মুখে ম্যাক্স পড়া ১০/১২ জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ বের হয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এসযময় কর্মীরা কিছুটা পিছনের দিকে সরে আসলে দুর্বৃত্তরা মাহাবুবুল হাসানকে ঘিরে ফেলে এবং তার কাছ থেকে লাইসেন্স করা পিস্তলটি ছিনিয়ে নেয়। সাবেক চেয়ারম্যানকে আক্রমণ করতে দেখে পাপ্পু, ফরহাদসহ ৪/৫ জন কর্মী এগিয়ে আসতে চাইলে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে দুর্বৃত্তরা। তাদের ছোঁড়া গুলিতে পাপ্পু ও ফরহাদসহ অন্যরাগুলিবিদ্ধ হলে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাহাবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় আড়ালে থাকা কর্মীরা ডাক চিৎকার শুরু করলে মাহবুব চেয়ারম্যানের লোকজন ছুটে আসলে ততক্ষণে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বালুর ট্রাকটিকে সেখানে দেখতে পাওয়া যায়নি। পরে মাহবুব চেয়ারম্যানসহ অন্য আহতদেরকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুব হাসানকে মৃত ঘোষণা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত পাপ্পু ও ফরহাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
মাহবুব চেয়ারম্যানের ছোট ভাই হাফেজ অলিউল্লাহ বলেন, বিগত নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাচনের জের ধরে পরাজিত প্রার্থীর লোকজন আমার ভাইকে হত্যা করেছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মেহেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিত প্রান্তের নির্দেশে ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আতাউর মেম্বার, রাসেল মাহমুদ, নয়ন, নুরু, অভি ও সেন্টূসহ চেয়ারম্যানের লোকেরা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. আসাদ আব্দুল্লাহ খান বলেন নিহত মাহবুবুল হাসানকে আমাদের এখানে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তার ঘাড়ে, পিঠে ও চোয়ালে ধারালো অস্ত্রের কাটা দাগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তাকে গুলি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোন চিহ্ন আমরা দেখতে পাইনি। তবে ময়না তদন্তের পরেই এবিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ হত্যার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। মরদেহ সদর হাসপাতালে নেয়ার পাশাপাশি আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে বলা যাবে।